বজবজ এবং তার সংলগ্ন স্থান, বাটা নগর একটি খুবই গুরত্বপূর্ণ স্থান , সেটা ঐতিহাসিক দিক থেকে হোক বা ভৌগলিক দিক ,বা ভারতের কৌশল গত দিক থেকেও এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
ঐতিহাসিক ভাবে বহু মহা পুরুষের পদ ধুলি লিপ্ত আমাদের এই বজবজ বাটানগর, তার মধ্যে অন্যতম হলেন স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , এবং লালা হারদায়াল এর কোমাগাথা মারু জাহাজের ইতিহাস। এই পুণ্যভূমি আদিকালের শিষ্টাচার এর সঙ্গে ও ইংরেজদের ঘোড়ার টক টক শব্দের সাথে নিজেকে কিছুটা উন্নত করেছে বললে মন্দ হয়না ।
ভৌগলিক ভাবে দেখতে গেলে যেহেতু এই অঞ্চলটি হুগলি বেল্ট এর অধীনে এবং হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত , সুতরাং জুট / পাটচাষের জন্য এই জলাভাস,নদীর পাড় সব কিছুই বিশিষ্ট। ।হয়তো সেটা বাঙালিরা বোঝার আগেই , ইংরেজরা পাট চাষ করে বহু ধন ও সম্পদ উপার্জন করে দেশ ছেড়েছে। সুতরাং অর্থনৈতিক দিক থেকে আমাদের রাষ্ট্র নির্মাণের পিছনে এই স্থানের অবদান শুরু থেকেই আছে ।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের মধ্যে রয়েছে বাটা শু লিমিটেড। এই কোম্পানির বিষয়ে একটি কবিতাও লিখেছেন আমাদের কবিগুরু, এবং ভারতের প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী জওয়াহার লাল নেহরু জি যে এই কোম্পানি তে এসেছিলেন , সেটা জানা যায় ইতিহাসের পাতা থেকে ।
এই বাটা কোম্পানি এবং জুট মিল , ভারত পেট্রোলিয়াম তেল শোধনাগার এবং সি ই এস সি র কয়লা দ্বারা বিদ্যুৎ নির্মাণ কেন্দ্র ,এখানকার বহু মানুষের কর্মসংস্থান এর মূল । এবং এই সংস্থা গুলি দশক এর পর দশক মানুষের অন্ন দাতা হিসেবে নিজের কাজ করে যাচ্ছে।
বর্তমানে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, যে হুগলি নদীর উভয় কুলের ব্যাক্তির আনাগোনা চলে এই বৃহৎ কোম্পানি গুলি তে।
কিন্তু কোথাও যেন রাজ্যের এবং কেন্দ্রীয় সরকারের চোখে বাটা নগর আজও অবহেলিত ব্যক্তির স্বরূপ নিয়ে একটা জরাজীর্ণ ঐতিহাসিক স্থান হয়ে পড়ে আছে
যদিও কিছু বৎসর পূর্বে আমাদের বাটানগর থেকে ব্রেস ব্রিজ নামক স্থানটির মধ্যে একটি সুবৃহৎ উড়ালপুল নির্মাণ হয় । কিন্তু সেটি সর্ব সাধারণের জন্য একটি অনর্থক উড়ালপুল হিসেবে, নিজের অস্তিত্ব স্থাপন করেছে ।এর পিছনে প্রধান কারণ হল এই যে , এই উড়াল পুল দিয়ে কেবল দুচাকা মোটর সাইকেল এবং চার চাকা গাড়ি যায়, এবং তার জন্যই এর নির্মাণ।
এই স্থানে গড় আয় হিসেব করলে দেখা যাবে যে ৬০% পরিবার মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত, যার দরুন বাইক বা চার চাকা তাদের কাছে বিলাসিতা মাত্র , বলা গেলে মন্দ হবেনা।
ভারতীয় রেল আজীবন কাল থেকে লোকাল ট্রেনের সংখ্যা একই রেখেছে , হয়তো কোচ এর সংখ্যা ৯ থেকে ১২ করেছে।
পরিবহন ব্যবস্থার দিক থেকে বাটা নগর আজকের দিনেও মুখ থুবড়ে পড়ে আছে । ফেরি, বাস, ট্রেন সবই আছে, কেবল নাম কে ওয়াস্তে, না আছে তাদের নির্দিষ্ট সময় সূচি, না আছে নিরন্তর পরিবহন সেবা ।
বি বি টি রোড একটি বহু পরিকল্পিত রাস্তা ,যেটি তারা তলা থেকে বজবজ অবধি এবং তার পরেও আছে । প্রায় এক দশক থেকে এই রাস্তার অবস্থা খুবই শোচনীয়, বড়ো বড়ো গর্তে ভরা, ভাঙ্গা রাস্তার কারণে সারা বছর এই রাস্তা প্রসিদ্ধ খবরের কাগজে । বাস এবং মাল বাহী ট্রাক উল্টে যাওয়া টা বাটানগরবাসির চোখে একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ কাল।
চক চকে উড়ালপুল থাকার পরেও কেন বি বি টি রোড এত অবহেলিত? এই প্রশ্ন আজ বাটা নগর বাসীদের মুখে মুখে, কিন্তু তার সদুত্তর দেওয়ার ক্ষমতা বর্তমান সরকারের কাছে হয়তো নেই বা তাঁরা উত্তর দেওয়া টা খুব প্রয়োজন মনে করেন না। এই রাস্তা টি একটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে বর্ষার সময় , যখন ডোবা রূপি গর্ত গুলো পূর্ণ হয়ে যায় বৃষ্টির জলে এবং মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে অসংখ্য বাটা নগর বাসীদের।
হয়তো বাটা নগর বাসীদের এই মৃত্যুর বলিদান কোনদিন শেষ হবেনা। এই স্থানটিকে পশ্চিম বঙ্গ সরকার ,কলকাতা হিসেবে গণ্য করলেও উন্নতির লেশ মাত্র নেই বললেই চলে। পৌরসভার অধীনে থাকলেও এটি কোনো গ্রামের চেয়ে কম নয়। মাল বোঝাই ট্রাক, বাস উল্টে বহু মানুষ আহত হয়েছেন এবং হয়তো আগামী বর্ষাকালে নিজের প্রাণের আহুতি দেওয়ার জন্য বাটা নগর বাসী নিজেকে প্রস্তুত করছেন ।
তাই আমরা চাই রাজ্য সরকার অতি শীঘ্রই একটি দীর্ঘ মেয়াদী রাস্তার নির্মাণ করুক বা এই রাস্তাটি সরিয়ে ,একটি দীর্ঘ মেয়াদী সুন্দর রাস্তার রূপ দিক, যাতে বাটা নগর বাসীরা একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারে।
আমাদের কেন্দ্রীয় সরকারকে এটাও আবেদন জানাচ্ছি যে দ্রুত গতির মেট্রো পরিষেবাকে তারাতলা থেকে বজবজ অবধি নিয়ে আসুক এবং লোকাল ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হোক । যেহেতু বাণিজ্যিক দিক থেকে এই স্থান থেকে সরকার বহু টাকা রাজস্ব আয় করে । এবং তার বিনিময়ে বাটা বজ বজ এর মানুষদের একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সুযোগ করে দিক।
বুরও রিপোর্ট : উড়ান নিউজ ।।
Post a Comment